নিজস্ব প্রতিবেদক: ছয় মাস পর পর বয়স্ক ভাতার তিন হাজার টাকা পাই। গত এপ্রিল মাসে ইউনিয়ন পরিষদের এশিয়া ব্যাংক থেকে টাকা তোলার সময় চেয়ারম্যানের লোক দাঁড়িয়ে থেকে পাঁচশ টাকা রেখে দেয়। এই পাঁচশ টাকা নাকি চেয়ারম্যানকে দিতে হবে। পরে আমি গিয়ে চৌকিদারকে জানাইছি, সে বলছে তার কিছুই করার নাই। কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার নোয়াবাদ ইউনিয়নের সিন্দ্রীপ গ্রামের মো. গিয়াস উদ্দিন এমন অভিযোগ করেছেন।
একই এলাকার শারীরিক প্রতিবন্ধী আবদুল খালেকেরও একই অভিযোগ। তিনি জানান, চেয়ারম্যানের কথা বলে তার কাছ থেকেও পাঁচশ টাকা রেখে দেওয়া হয়েছে।
ঝাউতলা গ্রামের আয়েশা আক্তার (৭০) বলেন, অনেকদিন ধরে বয়স্ক ভাতা কার্ডের লাইগ্যে চেয়ারম্যানের কাছে ঘুরতাছি। চেয়ারম্যান আইজ না কাইল বলে ঘুরাইতাছে। যারা টাকা দিছে, তারা একদিন গিয়েই কার্ড পাইছে। একই এলাকার জরিনা আক্তার (৭২) বলেন, যারা চেয়ারম্যানকে পাঁচশো-হাজার টাকা দিছে, তারাই কার্ড পাইছে। আমি টাকা দিতে পারি নাই, ভাতার কার্ডও পাই নাই।
নোয়াবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে রয়েছে এমন বিস্তর অভিযোগ। পরিষদের ছয়জন ইউপি সদস্য চেয়ারম্যানের অসদাচরণ, স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। অভিযোগে বলা হয়, প্রতিমাসে ইউপি সদস্যদের নিয়ে সভা করার কথা থাকলেও চেয়ারম্যান বিগত আট মাসে সভা করেছেন দুটি। এ দুটি সভাতেও ইউপি সদস্যের মতামত নেওয়া হয়নি। গত শুক্রবার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মানববন্ধনও করেছেন এলাকাবাসী।
৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুল জলিল জানান, নোয়াবাদ ইউনিয়নের অনুকূলে বয়স্ক ভাতা কার্ডের বরাদ্দ আসে ৭১টি, কিন্তু চেয়ারম্যান কোন সভা ছাড়াই এককভাবে সবগুলো কার্ডের নাম সমাজসেবা অফিসে জমা দেন।
৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য রোকেয়া আক্তার জানান, চেয়ারম্যানরের অনিয়ম ঠেকাতে সাতজন পুরুষ মেম্বারসহ আমরা তিনজন মহিলা মেম্বার পবিত্র কোরআন ছুঁয়ে শপথ নিয়েছিলাম। এ খবর জেনে চেয়ারম্যান চারজনকে দশ হাজার টাকা করে দিয়ে তার পক্ষে নিয়ে গেছেন। তবে আমরা ছয়জন এখনও চেয়ারম্যানের অনিয়মের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আছি।
সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা কামাল। সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতেই এমন অভিযোগ করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, এসব অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম জানান, নোয়াবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য করিমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।