নিজস্ব প্রতিবেদক: বিজ্ঞান বইয়ে ১১ জন উলঙ্গ নারী-পুরুষের ছবি দিয়ে তাদের লজ্জাস্থানের পরিচয় দেওয়া হয়েছে এবং ছেলে মেয়েদের বিভিন্ন অঙ্গের বর্ণনা দিয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ঈমানহারা করার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে মাদ্রাসাশিক্ষকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।
এসব বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে জমিয়াতুল মুদাররেছিনের ব্যানারে আজ সোমবার কিশোরগঞ্জে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন মাদ্রাসাশিক্ষকরা। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের সড়কে সকাল সাড় ১০ টা থেকে বেলা সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালিত হয়।
৯ টি বইয়ে শতশত মেয়ের বেপর্দা ছবি ছাপানো হয়েছে, রয়েছে হিন্দু নারীদের শাঁখা পরা ছবিও। ইংরেজি বইয়ে কুকুর ও নেকড়ে বাঘের ২৪ টি ছবি ছাপানো হয়েছে, যা ইউরোপীয় সংস্কৃতির অংশবিশেষ বলে মন্তব্য করেছেন তারা। এছাড়া ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ডারউইনের বিবর্তনবাদ, দেব-দেবীর নগ্ন ও অর্ধনগ্ন ছবি এবং দেবতাদের পরিচয় দেওয়া হয়েছে, যা আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে প্রত্যাখ্যাত বলে মনে করেন তারা। জীবন-জীবিকা বইয়ে ইশপের গল্প, প্রণাম, গানশোনা, নাচ, বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের পাশ্চাত্য ও মূর্তিপূজার সংস্কৃতি চর্চার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও দুর্গাপূজা, গীতাঞ্জলি, কিশোর-কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন অত্যন্ত লজ্জাজনকভাবে উপস্থাপিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তারা।
মাদ্রাসায় এসব বই পাঠপুস্তক হিসেবে গ্রহণ ও ব্যবহারে ঘোর আপত্তি জানিয়েছেন মাদ্রাসাশিক্ষকরা।
মানববন্ধনে জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এ বর্ণিত মাদ্রাসা শিক্ষার স্বীকৃতি, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণের উপযোগী শিক্ষাক্রম ও পাঠসূচি, পাঠ্যবই, এনসিটিবি, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও জামিয়াতুল মোদাররেছিনের বিশেষজ্ঞ আলেমদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন, প্রচলিত পাঠ্যপুস্তকে পাঠদান অব্যাহত রাখা, দাখিল পরীক্ষার জন্য মূল বিষয় ঠিক রেখে সমন্বয় সাধন করে ১০০০ নম্বর নির্ধারণ করাসহ ১৩ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এছাড়া বেসরকারি সকল স্তরের শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকুরি জাতীয়করণ, সংযুক্ত ইবতেদায়ী প্রধানসহ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষকদের উপযুক্ত বেতনভাতা প্রদান এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ন্যায় স্বতন্ত্র ও সংযুক্ত ইবতেদায়ী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি, টিফিনসহ সকল সুযোগ সুবিধা দেওয়ার দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন জমিয়াতুল মুদাররেছিন কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ মাসউদ আলম, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মোহাম্মদ আনোয়ারুজ্জামান, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আব্দুল খালেক, তাড়াইল উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা মজিবুর রহমান, ভৈরব উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা তাওহিদুল ইসলাম, হোসেনপুর উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা লিয়াকত আলী, করিমগঞ্জ উপজেলা মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতি মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক প্রমুখ।
মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
মানববন্ধন সঞ্চালনা করেন করিমগঞ্জ উপজেলার ঝাউতলা মাদ্রাসার আরবি বিভাগের প্রভাষক মাওলানা মো. মহসিন উদ্দিন।