নিজস্ব প্রতিবেদক: “একটা ব্রিজের জন্য কত কষ্ট করতাছি। বর্ষায় যহন নদীতে পানি বেশি থাহে, তহন অনেক সময় গুদারাত্যে (ফেরি নৌকা থেকে) পইড়ে যাই। কোন সময় গুদারা ডুইব্বা যায়। আবার শুকনার সময় নদীর কাদা ভাইঙ্গা যাওন লাগে। প্রায় সময়ই সময়মত স্কুলে যাইতে পারিনা। অহন আমরার একটাই দাবি, নদীর ওপর ব্রিজ চাই।”
কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার দিলালপুর আব্দুল করিম উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কেয়া মনি এভাবেই তার কষ্টের কথাগুলো বলেছেন। তার বাড়ি নদীর ওপারে মাইজচর এলাকায়। প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে নদী পাড় হয়ে তাকে স্কুলে আসা যাওয়া করতে হয়। মাইজচর এলাকার প্রায় দুশতাধিক শিক্ষার্থী প্রতিদিন ফেরি নৌকা পাড় হয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া আসা করে। মাইজচর থেকে দিলালপুর আসতে সড়ক পথে যোগাগোগের কোন ব্যবস্থা নেই। মাঝখানে ঘোড়াউত্রা নদী। ফেরি নৌকা দিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষকে নদী পাড় হতে হয়।
এখানে সেতু নির্মিত হলে শুধু মাইজচর নয়, পার্শ্ববর্তী সরাইলের রাজাপুর, ধোবাজাল, নাসিরনগরের পেদিয়ার কান্দি, চাতলপাড়, ভৈরবের মেন্দিপুর ও সাদেকপুরের সঙ্গেও যোগাযোগ স্থাপিত হবে বলে জানান এলাকাবাসী।
বাজিতপুর উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জায়েদ উল্লাহ ফুরকান বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা কঠিন হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ছে। তিনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে গেলে আমাদেরকেও এর অংশীদার করতে হবে। তাই অবিলম্বে নদীর ওপর সেতু নির্মাণ জরুরী।
মাইজচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাবারক মিয়াজি জানান, উপজেলা সদর থেকে আমাদের ইউনিয়নটি একেবারেই বিচ্ছিন্ন। দেশ স্বাধীনের পর থেকে সেতুর দাবি থাকলেও এই নদীর ওপর সেতু হয়নি। কেউ অসুস্থ হলে সময়মতো চিকিৎসা করা সম্ভব হয় না। অনেক সময় নদী পাড় হওয়ার আগেই বিনা চিকিৎসায় রোগী মারা যায়। এখানে সেতু নির্মাণ করা হলে এ অঞ্চলের কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ সকল ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হবে বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য সম্প্রতি এলাকা পরিদর্শন করেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের (পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণে সমীক্ষা প্রকল্পের পরিচালক) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. এবাদত আলী। তিনি জানান, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্যের ডিও লেটারের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এলাকাটি পরিদর্শন করেছেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এখানে সেতু নির্মাণের আশ্বাস দেন তিনি। তার আগমনের সংবাদে এলাকার হাজারো মানুষ ভিড় করেন নদীর তীরে। “আর কোন দাবি নাই, নদীর ওপর ব্রিজ চাই” স্লোগানে মুখরিত করে তুলেন তারা।
কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর-নিকলী) আসনের সংসদ সদস্য মো. আফজাল হোসেন বলেন, এলাকাটির গুরুত্ব বিবেচনা করে এবং জনগণের দাবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই সেতু নির্মাণের জন্য ডিও লেটার দিয়েছি। সেতুটি নির্মিত হলে এখানকার উন্নয়নে নব দিগন্তের সূচনা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।