নিজস্ব প্রতিবেদক: পৌনে চারকোটি টাকা আত্মসাত ও প্রায় ৯ কোটি টাকা সরকারি অর্থের হিসাবে গড়মিলের অভিযোগে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সাবেক ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা সেতাফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ জেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের সাবেক অডিটর সৈয়দুজ্জামানসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার মামলাটি দায়ের করেন দুদক কিশোরগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মাহাথীর মুহাম্মদ সামী।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ভুয়া এডভাইস প্রণয়ন এবং ভুয়া এডভাইস ব্যবহার করে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে এলএ (ভূমি অধিগ্রহণ) চেকগুলো জেলা হিসাবরক্ষণ অফিস থেকে নগদায়নের মাধ্যমে ৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন। এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়, প্রাপকের আবেদন গ্রহণ, মালিকানা স্বত্বের প্রামাণিক দলিল, রোয়েদাদ বইতে লিপিবদ্ধ না করে এবং স্বত্ব মালিকানা অনুযায়ী বিতরণ করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট এলএ চেকের মুড়ির অংশ এবং প্রাপকের অংশে ভিন্ন তথ্য লিপিবদ্ধ করে এলএ চেকগুলো বিতরণ করা হয়।
শুধু তাই নয়, লেজার বইয়ের সঙ্গে জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের রেজিস্টারে বিভিন্ন সময় ৮ কোটি ৯৬ লাখ ৫৭হাজার ৩৬ টাকার গড়মিলও পরিলক্ষিত হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
মামলার বাদী দুদক কিশোরগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মাহাথীর মুহাম্মদ সামী এ প্রদিবেদককে জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদনসাপেক্ষে মামলাটি রুজু করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, এটি একটি বড় মামলা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই অনুসন্ধানকাজ শেষ করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে ৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে আত্মসাত করেছেন এবং ঘষামাজা করে প্রতারণায় আশ্রয় নিয়ে ৮ কোটি ৯৬ লক্ষ ৫৭ হাজার ৩৬ টাকার গড়মিল পাওয়া গেছে। ২০১৬ সালের মার্চ থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে টাকাগুলো আত্মসাত করা হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলার অপর আসামিরা হলেন কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার পশ্চিম বসন্তপুর এলাকার আব্দুল্লাহ আল মামুন, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকার কে. এ আল মামুন, গাজীপুরের জয়দেবপুরের (স্থায়ী ঠিকানা বরিশালের মুলাদী) কামরুজ্জামান, ঢাকার ডেমরার জাহাঙ্গীর আলম, ঢাকার কাফরুলের (স্থায়ী ঠিকানা কুড়িগ্রামের চিলমারী) আনিছুর রহমান, ফরিদপুর জেলা সদরের মোহাম্মদ মাহমুদ হোসেন শিমুল, কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের রায়হান উদ্দিন, ঢাকার মুগদার (স্থায়ী ঠিকানা কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর) জিলন খাঁন, বাজিতপুরের শোভারামপুর এলাকার আবুল কালাম ও একই এলাকার আবদুল হামিদ।
তাদের বিরুদ্ধে সাবেক ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা সেতাফুল ইসলাম ও জেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের সাবেক অডিটর সৈয়দুজ্জামানের সঙ্গে যোগসাজশে প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয়ে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সেতাফুল ইসলাম ২০১৬ সালের ৮ মার্চ থেকে ২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে পিরোজপুর জেলায় বদলী হন তিনি।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, তৎকালীন সময় কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলায় নতুন সেনানিবাস স্থাপন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক ও জনপথ বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ আসে। সেই বরাদ্দ থেকেই টাকা আত্মসাত করা হয়।
ভূমি অধিগ্রহণের ৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১৮ সালে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় দায়েরকৃত একটি মামলা দায়ের করেছিল দুদক। সেই মামলায় ঐ বছরের ১৭ জানুয়ারি সেতাফুল ইসলামকে পিরোজপুর জেলা সার্কিট হাউজের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়। সে সময় দুদক কর্মকর্তারা অভিযান চালিয়ে ৮৮ লাখ টাকা জব্দ করেছিল। আদালতে ইতোমধ্যে মামলাটির অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন।