নিজস্ব প্রতিবেদক: নিজের নাম, পিতার নাম, ঠিকানা ও পেশা পরিবর্তন করে নিজ এলাকা ছেড়ে ভিন্ন জায়গায় নাগরিকত্ব ও ভোটার তালিকাভূক্ত হয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়লেন হত্যাকারী। নাম তার ওয়াহিদুল্লাহ। কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার মৌটুপি গ্রামের মৃত রূপ বাদশার ছেলে তিনি।
গত রবিবার রাত ১১টার দিকে সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার বিন্নারবন্দ এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে কিশোরগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আজ সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) তাকে কিশোরগঞ্জ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
পুলিশ জানায়, ১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভৈরবের মৌটুপি এলাকা সংলগ্ন রসুলপুরের এক ডোবায় অজ্ঞাতনামা এক তরুণীর (২১) মরদেহ পাওয়া যায়। বিষয়টি তখন এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। এ ব্যাপারে ভৈরব থানায় একটি মামলা (নং ১০ (০৯) ১৯৯৬) হয়। ঘটনার পর থেকেই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান মৌটুপি গ্রামের ওয়াহিদুল্লাহ। পুলিশ আরও জানায়, ঢাকায় বাদাম বিক্রি করতেন ওয়াহিদুল্লাহ। একপর্যায়ে তেজগাঁও বেগুনবাড়ি এলাকার একটি গার্মেন্টের দারোয়ান নিজামের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। এর সূত্র ধরে নিজাম তার কথিত স্ত্রীকে (হত্যার শিকার তরুণী) নিয়ে ভৈরবে ওয়াহিদুল্লাহর বাড়িতে বেড়াতে আসেন। পরে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়।
এদিকে তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যার বিষয়টি পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে। ভৈরব থানায় রুজুকৃত মামলার তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। অভিযোগপত্রের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০২ সনের ৯ অক্টোবর কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পলাতক ওয়াহিদুল্লাহকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন।
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) মো. আল আমিন হোসাইন জানান, পলাতক ওয়াহিদুল্লাহ ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়িয়েছেন। একপর্যায়ে সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার বিন্নারবন্দ এলাকায় গিয়ে নাম, পিতার নাম ও ঠিকানা পরিবর্তন করে নতুন পরিচয় ধারণ করেন তিনি। নিজের নাম ও পরিচয় পরিবর্তন করে রাখেন অদুদ মিয়া এবং পিতা ইছব আলী, মাতার নাম–আছব বিবি, সাং–বিন্নারবন্দ, উপজেলা–তাহিরপুর, জেলা–সুনামগঞ্জ, পেশা–কৃষি। ঐ এলাকার ঠিকানা ব্যবহার করে তিনি জাতীয় পরিচয় পত্র (নং ৯০০৪৩৫১৩৫৪৬০) গ্রহণ করেন। স্ত্রী–সন্তানসহ নতুন ঠিকানায় বসবাস করতেন এবং ঐ এলাকায় নিজ নামে জমিও ক্রয় করেন।
তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। গ্রেফতারের পর প্রাথমিকভাবে ওয়াহিদুল্লাহ তার প্রকৃত নাম ও ঠিকানা অস্বীকার করলেও জিজ্ঞাসাবাদে ছদ্মবেশের কথা স্বীকার করেন।