নিজস্ব প্রতিবেদক: কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া আওয়ামী লীগের সভা-সমাবেশ কিংবা শোডাউন মানেই একপক্ষের বাধা প্রদান এবং পরিণামে সংঘর্ষ। এমনটাই হয়ে আসছে বেশ কয়েক বছর ধরে। সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে অহরহ। এর পরিপ্রেক্ষিতে মামলায় জর্জরিত অনেক নেতাকর্মী।
কিন্তু দীর্ঘদিন পর এবারই ব্যতিক্রম ঘটলো। পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম রেণু বিশাল শোডাউন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকালে অনুষ্ঠিত শোডাউনে দলের হাজারো নেতাকর্মী অংশ নেন।
দুপুর থেকেই পাকুন্দিয়া সদর ঈদগাহে জমায়েত হতে শুরু করেন নেতাকর্মীরা। বিকাল ৩টার মধ্যেই কানায় কানায় ভরে যায় ঈদগাহ ময়দান। সহস্রাধিক মোটরসাইকেল ও শতাধিক মাইক্রোবাসের বহর নিয়ে পাকুন্দিয়া বাজার প্রদক্ষিণ করে গাড়ির বহর। পরে মির্জাপুর, থানাঘাট, বুরুদিয়া, কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ড, মধ্যপাড়া ও পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের দরগাবাজার হয়ে হোসেন্দী খেলার মাঠে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় সড়কের দুধারে বিপুল সংখ্যক জনতা স্লোগান দিয়ে স্বাগত জানায়। শোডাউনে একটি খোলা জিপে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে জনতাকে অভিনন্দন জানান রফিকুল ইসলাম রেণু। ভটভটির ওপর রাখা কাঠের তৈরি নৌকা শোডাউনে সকলের নজর কাড়ে। বিশাল এই বহরে অন্যরকম আকর্ষণ ছিল খোলা পিকআপে বাদ্যযন্ত্রীদলের অংশগ্রহণ। তারা স্লোগানের তালে তালে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে মাতিয়ে রাখেন।
সন্ধ্যায় হোসেন্দী খেলার মাঠে উন্মুক্ত মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তব্য রাখেন রফিকুল ইসলাম রেণু। তিনি বলেন, একসময় আওয়ামী লীগের ঘাটি ছিল পাকু্ন্দিয়া। কিন্তু আজ নিজেদের মধ্যে রেষারেষি, মতনৈক্য, প্রতিপক্ষের ওপর হামলা, মামালায় জর্জরিত নেতাকর্মীরা। এতে করে বিরোধী রাজনৈতিক দল ফায়দা লুটছে। আবেগাপ্লুত কণ্ঠে তিনি বলেন, তিনি নিজেও হামলা, মামলার শিকার হয়ে জেল খেটেছেন। ঈদেরদিনও বাড়িতে থাকতে পারেননি। ঈদ উপলক্ষে দূরের মানুষ বাড়িতে আসে। অথচ হামলা, মামলার শিকার হয়ে ঈদেরদিনও আমাকে বাড়ি ছাড়তে হয়েছে। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের উপজেলা সভাপতি থেকে শুরু করে যুবলীগ, আর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পরে যুগ্ম আহ্বায়ক হয়েছেন। কিন্তু দলীয় কোন্দলের কারণে বর্তমানে তাকে উপজেলা কমিটির সদস্যও রাখা হয়নি। অথচ উড়ে এসে জুড়ে বসে অনেকেই সংকীর্ণ স্বার্থে দলকে খণ্ড বিখণ্ড করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৃণমূলে যাচাই বাছাই করে জনপ্রিয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অনুরোধ জানান এই নেতা। ত্যাগী নেতাকর্মীরা দলের যে কোন দুর্যোগে শেখ হাসিনার ডাকে জীবন দিতেও প্রস্তুত বলে ঘোষণা করেন তিনি। শান্তিপূর্ণভাবে শোডাউনে সহযোগিতা করায় সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান রফিকুল ইসলাম রেণু। দলের বৃহত্তর স্বার্থে কোন্দল নিরসন করে শেখ হাসিনার হাতকে শাক্তিশালী করে আগামীতেও দলকে ক্ষমতায় নেওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
উল্লেখ্য, কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনের সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ, পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট সোহরাব উদ্দিন ও পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেণুর নেতৃত্বাধীন তিনটি পৃথক গ্রুপে বিভক্ত স্থানীয় আওয়ামী লীগ। এর আগে প্রায় সবগুলো একক কর্মসূচিতেই বাধা ও সংঘর্ষ, এমনকি ১৪৪ ধারা জারির মত ঘটনাও ঘটেছে।