ঢাকামঙ্গলবার , ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি
  3. আন্তর্জাতিক
  4. ইতিহাস ঐতিহ্য
  5. করোনা আপডেট
  6. ক্যাম্পাস
  7. ক্রীড়া জগৎ
  8. জাতীয়
  9. তথ্য প্রযুক্তি
  10. ধর্ম
  11. নারী অধিকার
  12. প্রবাস সংবাদ
  13. বিনোদন
  14. রাজনীতি
  15. সম্পাদকীয়
আজকের সর্বশেষ সবখবর

একুশে পদকে মনোনীত মৌলভী আশরাফুদ্দীন আহমদ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

প্রতিবেদক
-
ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৪ ১২:২৬ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

নিউজ একুশে ডেস্ক: এবার একুশে পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন কিশোরগঞ্জের বিশিষ্ট ভাষাসংগ্রামী প্রয়াত মৌলভী আশরাফুদ্দীন আহমদ। মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদকপ্রাপ্ত ও প্রয়াতদের পরিবারের সদস্যদের হাতে একুশে পদক তুলে দিবেন। মৌলভী আশরাফুদ্দীন আহমদ এর পক্ষে পদক গ্রহণ করবেন তার ছেলে কিশোরগঞ্জ সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম পৌর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ শরীফ আহমদ সাদী।

একুশে পদকে ঘোষিত মৌলভী আশরাফুদ্দীন আহমদ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী এখানে তুলে ধরা হলো:

১৯২২ সনের জুন ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জের  চরপুম্বাইল গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে মফিজ উদ্দীনের ঔরসে মীরাজী বেগমের গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন আশরাফুদ্দীন। জন্মের মাস পর মাতৃহীন হয়ে যান। খালার কাছে বড় হন। মামার বাড়িতেই কাটে তার শৈশব। / বছর বয়সে গরু চড়ানোর দায়িত্ব পড়ে। নান্দাইল থানার দিলালপুর প্রাইমারি স্কুলের মাঠে গরু চড়িয়ে স্কুলের বারান্দায় বসে থাকেন। বারান্দায় বসে ক্লাস রুমের ভেতরে সমবয়সী ছাত্রদের দিকে তাকিয়ে থাকেন। শিক্ষকের পড়ানো সেই স্বরবর্ণ ব্যঞ্জনবর্ণের পাঠ তিনি ক্লাসরুমের বাইরে বারান্দায় বসে নিয়েছিলেন এবং বর্ণমালা বাল্যশিক্ষা তিনি এখান থেকেই শিখে ফেলেছিলেন। এই দৃশ্যটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক মৌলভী আব্দুল হামিদের চোখ এড়ায়নি। একদিন মৌলভী আব্দুল হামিদ  রাখাল বালকটিকে ডেকে নাম পরিচয় জিজ্ঞেস করলেন। অতঃপর তিনি পরদিন বালক আশরাফুদ্দীনের মামার কাছে গিয়ে বললেন, “আপনার ভাগ্নেটাকে স্কুলে দেন। তার পড়াশুনার আগ্রহ আছে।” মামা রাজি হলেন। সেই থেকে দিলালপুর প্রাইমারি স্কুলে লেখাপড়া শুরু। তখন চতুর্থ শ্রেণিতে বৃত্তি ছিল। চতুর্থ শ্রেণিতে ভালো ফলাফল করে বৃত্তি পেলেন। পঞ্চম শ্রেণিতে এসে ভর্তি হলেন কিশোরগঞ্জ ইংলিশ মাইনর স্কুলে (বর্তমান পিটিআই) ষষ্ঠ শ্রেণিতেও বৃত্তি পেলেন। সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন কিশোরগঞ্জ আজিম উদ্দিন হাইস্কুলে। ১৯৪১ সনে আজিমউদ্দিন হাই স্কুল থেকে কলকাতা বোর্ডের অধীনে মেট্রিকুলেশন পাস করেন প্রথম বিভাগে। সে বছর বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলায় মেধা তালিকায় তিনি দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। কিশোরগঞ্জে তখনও কোনো কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ভর্তি হয়েছিলেন ময়মনসিংহ  আনন্দমোহন কলেজে। সেখানে আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেননি। দুই বছর পিছিয়ে পড়লেন। ইতোমধ্যে ১৯৪৩ সনেকিশোরগঞ্জ কলেজ” (গুরুদয়াল কলেজ) প্রতিষ্ঠিত হয়। এই কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রথম ব্যাচের ছাত্র তিনি। ১৯৪৫ সনে আইএ পরীক্ষায় ১ম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯৪৭ সনে ডিস্টিংশন নিয়ে বিএ পাস করেন

আজিম উদ্দিন হাই স্কুলের ছাত্র থাকাকালীন অহিংস গান্ধীবাদী রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। প্রথমে কংগ্রেসের একজন কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে মুসলিম লীগের অভ্যন্তরে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং আবুল হাশিমের প্রগতিশীল অংশের সাথে মনস্তাত্ত্বিকভাবে জড়িয়ে যান। কিশোরগঞ্জ মহকুমা মুসলিম লীগ সেই সময়ের নেতৃবৃন্দের মধ্যে এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা, দাম্ভিকতা প্রকটভাবে দৃশ্যমান ছিলো। কখনো কখনো সামন্তপ্রভুর মত সাধারণ মানুষের ওপর তারা নিপীড়ন চালাতো। তিনি এবং আরো কিছু যুবক কর্মী প্রতিবাদমুখর ছিলেন। এই প্রতিবাদী মানসিকতার মধ্য দিয়েই প্রস্তুত হতে থাকে আগামী দিনের প্রগতিশীল নতুন রাজনীতির ক্ষেত্র। 

১৯৪৩ সালেকিশোরগঞ্জ কলেজেভর্তি হওয়ার পর পূর্ববাংলায় দেখা দেয় খাদ্যাভাব। ৪৩ এর মন্বন্তরে কংগ্রেস মুসলিম লীগের প্রগতিশীল কর্মী কিছু কমিউনিস্ট কর্মী মিলে দুস্থ পীড়িত মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। দুর্ভিক্ষের কারণে কলেরায় যখন গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়ে যাচ্ছে, অসংখ্য মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে, তখন তিনি তার সহপাঠী এবং রাজনৈতিক সহকর্মীদের সাথে  নিয়ে মৃত লাশ সৎকারের কাজে নেমে পড়েন। এভাবেই ছাত্র অবস্থায় মানবসেবার ব্রত নিয়ে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন তিনি।

গুরুদয়াল কলেজে ডিগ্রি ক্লাসে পড়ার সময় ১৯৪৬৪৭ সেশনে মনোনীত ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৬ সনে পাকিস্তান আন্দোলনের অংশ হিসেবে সিলেট রেফারেন্ডামে  কিশোরগঞ্জ থেকে একটি টিম সিলেট গমন করে। এর নেতৃত্ব দেন আশরাফুদ্দীন আহমদ।মুজিব ভাইএর সাথে প্রথম সাক্ষাৎ ঘটে সেখানেই। ঐতিহাসিক সিলেট রেফারেন্ডাম থেকেই আওয়ামী  রাজনীতির দীক্ষা গ্রহণ করেন, ‘মুজিব ভাইয়েরশিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক অঙ্গণে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা তৎকালীন যুবনেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৪৯ সনে নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হলে কিশোরগঞ্জ মহকুমায় আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা কয়েকজনের একজন আশরাফুদ্দীন আহমদ। ১৯৫১ সনে কাউন্সিলে প্রথম কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন মো. জিল্লুর রহমান (প্রয়াত রাষ্ট্রপতি) এবং সাধারণ সম্পাদক হন মৌ. আশরাফুদ্দীন। ভাষা আন্দোলনে কিশোরগঞ্জে ছিলো তার সক্রিয় ভূমিকা। ১৯৪৭ বিএ পাশ করার পর তিনি শিক্ষার মশাল হাতে এগিয়ে আসেন। সেই সময়ের অশিক্ষা, গোঁড়ামি, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে মানুষকে জাগ্রত করার ব্রত নিয়ে শিক্ষকতায় আসেন। বিশেষত পিছিয়ে থাকা মুসলিম জনগোষ্ঠীকে শিক্ষাদীক্ষায় এগিয়ে আনার সংগ্রামের অংশ হিসাবে এই মহান পেশা বেছে নেন। কিশোরগঞ্জ রামানন্দ হাই স্কুলে (কিশোরগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়) শিক্ষকতায় যোগদান করেন। শিক্ষকতার সময়েই ভাষা আন্দোলনের শুরু। একই বিদ্যালয়ের শিক্ষক তার সহকর্মী সুখরঞ্জন রায় তিনি বাংলা ভাষার পক্ষে মানুষকে সচেতন করতে লাগলেন। তার নেতৃত্বে এবং সভাপতিত্বে মিছিল মিটিং সমাবেশ হতে থাকে। ছাত্র যুব সমাজকে তিনি ভাষা আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন। তার নামে হুলিয়া জারি হয়। আরো কয়েকজন ভাষা সংগ্রামীর সাথে তিনিও গ্রেপ্তার হন। রামানন্দ হাইস্কুলের শিক্ষকতার চাকুরীর উপর প্রশাসনের খড়গ নেমে আসে। মৌ. আশরাফুদ্দীন সুখরঞ্জন রায় (অরুণবাবু)কে রামানন্দ হাইস্কুল থেকে পাক সরকারের স্থানীয় প্রশাসন বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তৎকালীন প্রধান শিক্ষকরায়সাহেবজগদীশচন্দ্র এই দুজনকে ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ না করার অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করার কথা বললে তারা তা প্রত্যাখ্যান করেন। ফলে এই বিদ্যালয় পরিত্যাগ করতে বাধ্য হন। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন  স্কুলে শিক্ষকতা করে এক পর্যায়ে দুই বন্ধু আজিমউদ্দিন হাই স্কুলের শিক্ষক হিসেবে স্থিত হন। ১৯৫৪ সালে জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে আবু তাহের খান পাঠান মৌ. আশরাফুদ্দীন  গ্রেফতার হন। যুক্তফ্রন্ট সেই নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর তিনি এবং বন্দী সাথীরা মুক্তি পান। ১৯৫৮ সামরিক শাসন পর্যন্ত তিনি মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।

১৯৭০ সনে পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে কিশোরগঞ্জ থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন মনোনয়ন না পেয়ে সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাহেবের সাথে নির্বাচনী প্রচারাভিযান চালান। মুক্তিযুদ্ধে তার ৩য় সন্তান ছাত্রলীগ নেতা সাব্বির আহমেদ মানিক এবং  বাড়ির আরো পাঁচজনকে দেশমাতৃকার জন্য অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়তে যুদ্ধে পাঠিয়ে দেন। অসংখ্য ছাত্রকে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করেন। 

১৯৭৫ সনের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ বাকশাল গঠিত হওয়ার পর ২০ এপ্রিল কিশোরগঞ্জে জাতীয় সংসদের একটি উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মনোনয়নে তিনজন প্রার্থীর মধ্যে স্কুল মাস্টার মৌলভী আশরাফুদ্দীন আহমদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। 

একজন কেতাদুরস্ত আলেম মৌলভী আশরাফুদ্দীন সারা জীবন মানব সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। শিক্ষকতা করেছেন, পাশাপাশি  আওয়ামী লীগ রাজনীতির সাথে আজীবন যুক্ত ছিলেন। ১৯৯৯ সনের ফেব্রুয়ারি ভাষার মাসেই তিনি কিশোরগঞ্জের নিজ বাসভবনে  ইন্তেকাল করেন। তার পুত্রের মধ্যে একজন বর্তমানে কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক একজন সদস্য।

আপনার মন্তব্য করুন