নিজস্ব প্রতিবেদক: ঘরের সিঁধ কেটে শিশু চুরির প্রায় ১৫ ঘন্টা পর উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় আটক করা হয়েছে দুজনকে। ঘটনাটি কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার তালজাঙ্গা ইউনিয়নের শাহবাগ গ্রামের।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাজ্জাদ হোসেন ও নাজমিন দম্পতির আড়াই মাস বয়সের শিশু জুনাইদকে ঘরের সিঁধ কেটে রবিবার শেষ রাতের দিকে কে বা কারা চুরি করে নিয়ে যায়। সকালে খবর পেয়ে গোয়েন্দা পুলিশ ও তাড়াইল থানা পুলিশ যৌথভাবে উদ্ধার অভিযানে নামে। সোমবার বিকাল ৪টার দিকে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার নীলগঞ্জ বেত্রাহাটি গ্রামের রুবেল মিয়ার বাড়ি থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় রুবেল ও তার শাশুড়ি সস্তুকে আটক করে পুলিশ।
শিশুটির মা নাজমিন জানান, শিশুটি পেটের অসুখে ভুগছিল। রবিবার রাত দেড়টার দিকে শিশুটিকে খাইয়ে দুজনই ঘুমিয়ে পড়েন। পাশেই ঘুমিয়েছিলেন নাজমিনের মা। ঘটনার সময় তার স্বামী সাজ্জাদ হোসেন কুমিল্লায় তার বোনের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। ফজরের আজানের সময় সজাগ হয়ে নাজমিন তার সন্তানকে না দেখতে পেয়ে কান্নাকাটি শুরু করেন। একপর্যায়ে ঘরে সিঁধ কাটা এবং সামনের দরজাটি খোলা দেখতে পান। কান্নাকাটি এবং চিৎকারের শব্দে প্রতিবেশিরাও ছুটে আসেন। মসজিদের মাইকেও শিশুটির সন্ধান চেয়ে ঘোষণা দেওয়া হয়। সকালে খবর দেওয়া হয় তাড়াইল থানায়। পরে গোয়েন্দা পুলিশ ও তাড়াইল থানার পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উদ্ধার অভিযানে নামে। সোমবার বিকাল ৪টার দিকে নীলগঞ্জ বেত্রাহাটি গ্রামের রুবেলের বাড়ি থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশ। সন্ধ্যায় শিশুটিকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেন পুলিশ সুপার।
সন্ধ্যার দিকে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ তার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, রবিবার রাত পৌনে ২টা থেকে ৪টার মধ্যে শিশুটি চুরি হয়। তিনি জানান, অনুসন্ধানের সময় তিন থেকে চারটি বিষয়কে টার্গেট করে আমরা আগাই। প্রথমত এটি হত্যাকাÐ কিনা, যে কারণে পুরো এলাকাটি সার্চ করা হয়। কিন্তু এ ধরণের কোন ক্লু পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয়ত ট্রান্সজেন্ডার শিশুটিকে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টিও মাথায় রেখে আগাই। কিন্তু সে রকমও কিছু পাওয়া যায়নি। পরে মনে হলো এটা চুরি। কিন্তু চুরিটা কে বা কারা করতে পারে মর্মে দুই শ্রেণির লোকদেরকে টার্গেট করে আগাই। যার অনেকগুলো মেয়ে সন্তান রয়েছে, শুধুমাত্র একটি ছেলের জন্য ভীষণ রকমের প্রত্যাশি। আশেপাশেই এ রকম খোঁজা শুরু করি। এরইমধ্যে একটি ক্লু পেয়ে সে অনুযায়ী কাজ শুরু করে পুলিশ। ক্লু অনুযায়ী পুলিশ জানতে পারে যে, জনৈক রুবেল–খাদিজা দম্পতির তিনটি কন্যা সন্তান রয়েছে, চতুর্থ সন্তানও কন্যা এটা তারা নিশ্চিত হয়েছেন। এ বিষয়ট যাচাই করার জন্য রবিবার যে হাসপাতালে খাদিজা কন্যা সন্তান জন্ম দিয়েছে, সেই হাসপাতালে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখানে গিয়ে রুবেল–খাদিজা দম্পতির একটি কন্যা ও একটি পুত্র সন্তান হয়েছে জানা যায়। দম্পতির দাবি অনুযায়ী এটি চতুর্থ কন্যা সন্তান এবং অন্যটি তাদের একমাত্র পুত্র সন্তান। কিন্তু রবিবার যে পুত্র সন্তানের জন্ম হয়েছে বলে তারা দাবি করছেন, তার বাহ্যিক অবয়ব ও লক্ষ্মণে সেটা একদিন আগের বলে মনে হয়নি। ফলে সন্দেহ ঘনিভূত হয়। পারিপার্শ্বিক সাক্ষিদের মাধ্যমেও বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও এ বিষয়ে পুলিশকে তথ্য প্রদান করে। পরে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, পুত্র সন্তানটি প্রকৃত অর্থেই রুবেল–খাদিজা দম্পতির সন্তান নয়। বরং এটি সাজ্জাদ–নাজমিন দম্পতির চুরি হওয়া সন্তান জুনাইদ।
আটক রুবেল ও তার শাশুড়ি শিশুটিকে চুরির কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন বলে জানান পুলিশ সুপার। পর পর চারটি কন্যা সন্তানের জন্ম হওয়া এবং পুত্র সন্তানের আকাঙ্খায় তারা এ কাজটি করেছে বলে ধারণা পুলিশের। এ বিষয়ে তাদেরকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।
এ ব্যাপারে ভিকটিমের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগের পর আটক রুবেল ও তার শাশুড়ি সস্তকে এ মামলায় সম্পৃক্ততা বিবেচনা করে মামলা রেকর্ড করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।