নিজস্ব প্রতিবেদক: দেড় বছরের আকামা (কাজের অনুমতিপত্র) দেওয়ার কথা বলে আরিফুল ইসলাম অপুকে (৩৪) সৌদি আরব নিয়েছিল দালাল জাকির মিয়া। অপু ঋণ করে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা তুলে দিয়েছিল জাকিরের হাতে। স্বপ্ন ছিল সংসারের উন্নতি আর দুই শিশু সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যত। কিন্তু সব স্বপ্ন মিথ্যে হয়ে গেল দালালের প্রতারণায়।
অপু কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার গুজাদিয়া হাইধনখালী গ্রামের সুরুজ আলীর ছেলে। সংসারে রয়েছে মা, বাবা, স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তান।
অপুর পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পার্শ্ববর্তী টামনি পিটুয়া গ্রামের সৌদি প্রবাসী জাকির মিয়া সৌদি যাওয়ার প্রস্তাব দেন অপুকে। জাকিরের হাতে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা তুলে দিয়ে গত বছরের ১৯ এপ্রিল অপু পাড়ি জমান সৌদি আরবে। কথা ছিল দেড় বছরের আকামা দেওয়ার। কিন্তু ছয় মাসের আকামা দেওয়া হয় তাকে। পরে আর আকামা না দেওয়ায় সৌদিতে অবৈধ হয়ে যান অপু। এ অবস্থায় দালাল জাকিরকে আকামা দেওয়ার কথা বললে আরও টাকা দাবি করেন তিনি। কিন্তু দরিদ্র অপুর পক্ষে আর টাকা দেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে আকামাও মিলেনি। আকামার জন্য তাগাদা দেওয়ায় অপুকে ভয় ভীতি ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতে থাকেন জাকির। আকামা না হওয়া, দেশে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা ঋণের বোঝা, সংসারের অভাব অনটন এসব চিন্তায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন অপু। মানসিক চাপে অবশেষে চলতি বছরের ১৮ জুন সৌদি আরবেই মৃত্যুবরণ করেন অপু। পরিবারের লোকজন অপুর লাশ আনার জন্য জাকিরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি আরও পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন। কিন্তু সে টাকা দেবার মত ক্ষমতা ছিলনা তার পরিবারের। ফলে লাশ পড়ে থাকে সৌদিতেই।
ঘটনাটি জানতে পেরে করিমগঞ্জের বাসিন্দা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি মাহমুদুল হাসান রনি তার ফেসবুকে বিষয়টি তুলে ধরেন। ফেসবুকের লেখাটি নজরে আসে কিশোরগঞ্জস্থ প্রবাসী উদ্যোক্তা ফাউন্ডেশনের সভাপতি সৌদি প্রবাসী আনোয়ার হোসেন মৃধা ও সাধারণ সম্পাদক অস্ট্রিয়া প্রবাসী শাহরিয়ার আশরাফ টুটুলের। তারা যোগাযোগ করেন সংগঠনের উপদেষ্টা আমিনুল ইসলাম আকন্দ, আব্দুল আওয়াল আঞ্জু এবং দেশে থাকা আবু বকর সিদ্দিক, দিগদাইড় ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সারোয়ার আলম ও ব্যবসায়ী ওমর ফারুকের সঙ্গে। তাদের সহযোগিতায় সৌদি আরবের সংশ্লিষ্ট কোম্পানি অপুর লাশ দেশে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়।
শুক্রবার বাড়িতে আনা হয় তার লাশ। শনিবার দক্ষিণ হাইধনখালী জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে রামনগর সামাজিক গোরস্তানে তাকে দাফন করা হয়।
সংগঠনের উপদেষ্টা আবু বকর সিদ্দিক জানান, দালাল জাকির পাশের গ্রামের বাসিন্দা হয়েও অপুকে নানাভাবে নির্যাতন করেছে। এমনকি মারা যাওয়ার পর তার লাশটি দেশে পাঠানোর কোন উদ্যোগই নেয়নি। প্রবাসী উদ্যোক্তা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে অপুর পরিবারকে এক লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুল হাসান রনি বলেন, অপুর মত এমন প্রতারণার শিকার যেন আর কেউ না হয়। তিনি দালাল জাকিরের বিচার দাবি করেন।
অপুর বৃদ্ধ পিতা সুরুজ আলী প্রবাসী উদ্যোক্তা ফাউন্ডেশনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পাশাপাশি দালাল জাকিরের বিচারও দাবি করেন।