নিজস্ব প্রতিবেদক: কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটুর বাসাসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। সৈয়দ টিটুর বাসায় দেওয়া আগুনে পুড়ে মারা গেছেন দুজন। এছাড়া এক যুবলীগ নেতাকে হাত-পা বেধে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া কিশোরগঞ্জে আন্দোলনকারী একজন স্ট্রোক করে এবং বাজিতপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন একজন ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রবিবার বেলা ১১ টার দিকে শহরের পুরানথানা মোড় থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলকারীদের হাতে লাঠি, দা, ছোরাসহ বিভিন্ন অস্ত্রসস্ত্র ছিল। মিছিল থেকে প্রথমে জেলা আওয়ামী লীগ অফিসে অগ্নি সংযোগ ও ব্যাপক ভাঙচুর করে। অফিসের সামনে থাকা তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় তারা। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটুর নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা প্রতিরোধ গড়ে তুলেন। দুপক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। প্রায় আধাঘন্টা ব্যাপী সংঘর্ষের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কিছুটা পিছু হটেন। এ সময় আন্দোলনকারীরা জেলা আওয়ামী লীগ অফিসের পাশেই সৈয়দ টিটুর ছয়তলা বাসভবনের নিচতলায় আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভবনেও আগুন দেয় তারা। ভাঙচুর করা হয় সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বাসাও। আগুন সৈয়দ টিটুর বাসার তিনতলা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় সৈয়দ টিটুসহ তার বাসার ভাড়াটিয়ারা বাসায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। পরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ গিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। রাস্তায় ব্যারিকেড থাকায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কিছুটা দেরিতে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। তারা বাসার গেট ভেঙ্গে আগুনে পোড়া একজন নারীসহ দুজনের লাশ এবং আহতদের উদ্ধার করেন।
কিশোরগঞ্জ ২৫০শয্যা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. একরাম উল্লাহ জানান, এ হাসপাতালে আগুনে পোড়া অঞ্জনা (৩০) নামে এক নারীসহ দুজনের লাশ আনা হয়েছে এবং চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে ২০ জনকে। এছাড়া শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. হেলাল উদ্দিন জানান, এ হাসপাতালে একজনের (৩০) লাশ আনা হয়েছে এবং চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে ৬৫ জনকে। গুরুতর আহত দুজনকে ময়মনসিংহে রেফার্ড করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের একটি সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার কর্শাকড়িয়াইল ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মবিনকে (৩০) হাত-পা বেধে কুপিয়ে হত্যা করেছে আন্দোলনকারীরা। তার লাশটিই সৈয়দ নজরুল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে। কিশোরগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় স্ট্রোক করে মারা গেছেন ফরহাদুল ইসলাম রুবেল (৩২) নামে এক আন্দোলনকারী। তিনি তাড়াইল উপজেলার তালজাঙ্গা গ্রামের আজহারুল ইসলামের ছেলে। চর শোলাকিয়া এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এখানে দেড়শর মত আহতকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আন্দোলনকারীরা শহরের পুরানথানা মোড় ও কাচারীবাজার বটতলা মোড়ের পুলিশ বক্স ভাঙচুর করে।
বেলা ১১টা থেকে বিকাল পর্যন্ত পুলিশ ও র্যাবের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ চলে।
এদিকে বাজিতপুরে আন্দোলনকারীরা দুটি বাস ও সাতটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় এবং গণনাট্য সংসদের অফিসে আগুন দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে কুদ্দুস (৩২) নামে একজন স্থানীয় একটি বেসরকারী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। তার বাড়ি বাজিতপুরের দিঘিরপাড় এলাকায়। এছাড়া পাকুন্দিয়া, কটিয়াদী ও ভৈরবে সংঘর্ষে অন্তত শতাধিক আহত হয়েছেন।