তাড়াইল (কিশোরগঞ্জ) সংবাদদাতা: কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে গণঅধিকার পরিষদের তারুণ্যের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার বিকালে তাড়াইল বাজার বালুর মাঠ সংলগ্ন এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন গণঅধিকার পরিষদ তাড়াইল উপজেলা শাখার সভাপতি জহিরুল হক।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন বলেন, ঢাকা থেকে আসতে গিয়ে রাস্তায় যে অবস্থা দেখলাম, এতে মনে হলো উন্নয়নের নামে কিশোরগঞ্জবাসীর সাথে বেইমানি করা হয়েছে। পুরো রাস্তা ভাঙাচোরা, কর্দমাক্ত। তিনি প্রশ্ন রাখেন, যে জেলা থেকে তিনজন রাষ্ট্রপতি হয়েছেন, সেই জেলার এই হাল কেন? এই এলাকার জনপ্রতিনিধি ছিলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি তো জাতীয় বেইমান। জাতীয় পার্টিকে শেখ হাসিনার দোসর বানিয়েছেন তিনি। জিএম কাদেরকে ব্ল্যাকমেইল করে আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে গিয়েছেন। এই বেইমানকে আপনাদের উচিত তাড়াইলে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা।
তিনি আরো বলেন, আমরা ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন করেছি। এরপর দল গঠন করে রাষ্ট্র সংস্কারের ঘোষণা দিয়েছি। আমরা তো সেই ২০২১ সালেই বলেছি, দলীয় প্রধান রাষ্ট্রপ্রধান হতে পারবেনা, দুইবারের বেশি কেউ রাষ্ট্রপ্রধান হতে পারবেনা, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে হবে। এই রাষ্ট্র সংস্কারের বাণী পৌঁছে দিতেই আমরা তাড়াইলে এসেছি।
তিনি বলেন, আমরা শেখ হাসিনাকে দেখেছি দলীয় প্রধান থেকে রাষ্ট্রীয় প্রধান হয়ে গণভবনকে আওয়ামী লীগের কার্যালয় বানিয়েছিলেন। পরপর চারবার ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগকে কর্তৃত্ববাদী দল বানিয়ে দেশে স্বৈরতন্ত্র কায়েম করেছিলেন। শেখ হাসিনা তার বাবার সাথেও বেইমানি করেছেন। ভেঙ্গে ফেলা ভাষ্কর্য দেখিয়ে তিনি বলেন, আপনাদের সামনেই শেখ মুজিবের ভাস্কর্য ভেঙে ঝুলে আছে। শেখ মুজিবকে দেবতা বানাতে গিয়ে জনগণের টাকা অপচয় করে সব জায়গায় ভাস্কর্য বানিয়েছেন শেখ হাসিনা। কিন্তু শেখ হাসিনা পালানোর পর তার ও তার পরিবারের কোন অস্তিত্ব জনগণ রাখেনি। এতোটাই ঘৃণা জনগণের মধ্যে তৈরি হয়েছিল। শেখ হাসিনাকে গণহত্যার মাস্টারমাইন্ড উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন কাউকে কাউকে আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড বলা হচ্ছে। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানে একক কাউকে মাস্টারমাইন্ড বলা মানে অন্যদের অবদান অস্বীকার করা। এই আন্দোলন ছিল সার্বজনীন আন্দোলন। সকল দল মত পথের মানুষ ছিল। ছাত্র–জনতার নেতৃত্বে এই দ্বিতীয় মুক্তি আমরা পেয়েছি। এটাতে আওয়ামী লীগের মত কেউ একক অর্জন মনে করলে, তাদের অবস্থাও তাদের মতই হবে। তিনি বলেন, এখন সময় এসেছে দেশকে গড়ার। কর্তৃত্ব ও নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে জড়িয়ে স্বাধীনতাকে কেউ নস্যাৎ করবেন না। আগামীতে জাতীয় ঐক্য ও সংহতির সরকার গঠন করে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।
সমাবেশে গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ বলেন, ছাত্র জনতার আন্দোলনে কিশোরগঞ্জে যারা গুলি চালিয়েছে তাদের অনেকেই এখনও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাদের দ্রুত আটক করতে হবে। আমরা শুনেছি শেখ হাসিনা ভারত ছেড়ে মধ্যপ্রাচ্যে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনার ঠিকানা কোনো দেশে নয়, শেখ হাসিনার ঠিকানা হবে তার সৃষ্টি করা আয়নাঘরে। গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের বিচার করতে হবে আগে, তারপর তাদের রাজনীতির চিন্তা। তাড়াইলের সন্তান মুজিবুল হক চুন্নুকে জাতীয় বেঈমান উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতীয় পার্টিকে গত কয়েক বছরে শেখ হাসিনার দাসে পরিণত করতে সবচেয়ে বেশি সরকারের হয়ে কাজ করেছেন এই চুন্নু। বিনিময়ে বাড়িগাড়িসহ আর্থিক সুবিধা পেয়েছেন, তাকেও বিচারের আওতায় আনতে হবে। গণঅধিকার পরিষদ ক্ষমতায় গেলে কৃষকদেরকে বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
দলের উচ্চতর পরিষদের সদস্য কৃষিবিদ শহিদুল ইসলাম ফাহিম বলেন, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের ঐতিহাসিক সমাপ্তি ২০২৪ এর ছাত্র জনতার এই অভ্যুত্থান। দীর্ঘ ১৬ বছর শেখ হাসিনার গুম, খুন, হত্যা নির্যাতনের বহিঃপ্রকাশ এই অভ্যুত্থান। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদ, বিএনপি, জামায়াত, ডান বাম সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে শেখ হাসিনাকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে। এই আন্দোলনের কোনো একক মাস্টারমাইন্ড নেই, তবে এটাও অস্বীকার করার সাধ্য নেই যে, ছাত্র–জনতা ভিপি নুরের কথা রেখে বাকী ১০ পারসেন্ট ধাক্কা দিয়ে সরকার পতন করেছে।
গণঅধিকার পরিষদের তাড়াইল উপজেলা শাখার সদস্য সচিব জাকিরুল ইসলাম বাকির সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের বৈদেশিক শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সহ দপ্তর সম্পাদক মোখলেসুর রহমান উজ্জ্বল প্রমুখ।