ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) সংবাদদাতা: কিশোরগঞ্জের ভৈরবে একই পরিবারের চারজনের মৃত্যুর ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। বুধবার অজ্ঞাত আসামি উল্লেখ করে মামলাটি দায়ের করেন নিহত জনি চন্দ্র বিশ্বাসের মা শিখা রানী বিশ্বাস।
মামলার বাদী শিখা রানী বিশ্বাস জানান, আমার ছেলে তার পরিবারসহ দেড়দিন আমার বাড়িতে বেড়ানোর পর সোমবার ভৈরব চলে আসে। তাদের পরিবারে কোন কলহ ছিলনা। সুন্দর সংসার ছিল। মঙ্গলবার তাদের মৃত্যুর খবর পেয়ে ভৈরবে এসে লাশ দেখলাম। তাদের মৃত্যুর ঘটনাটি রহস্যজনক দাবি করে তিনি বলেন, সে কারণেই থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছি। ঘটনার রহস্য বের করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করেন তিনি।
যে বাসায় ঘটনাটি ঘটেছে, সেই বাসার মালিকের স্ত্রী রিনা বেগম জানান, তিনমাস আগে জনি তার পরিবার নিয়ে বাসাটি মাসে সাড়ে ছয় হাজার টাকায় ভাড়া নেন। বাসায় কার্তিক বর্মণ নামের এক শ্রমিক সাবলিজ হিসেবে অর্ধেক ভাড়ায় থাকত। কার্তিকের স্ত্রী ও ছোট মেয়ে রয়েছে। সাবলিজ নেয়া কার্তিকের স্ত্রী সৃষ্টি বর্মণ জানান, গত রবিবার জনি তার পরিবার নিয়ে বাবার বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরা থানার আনোয়ারাবাদ গ্রামে যায়। সোমবার বিকাল সাড়ে ৫ টায় তারা বাসায় ফিরে। এদিন রাতে আমি স্বামীকে নিয়ে মাজারে যাই। রাত সাড়ে ১১ টায় বাসায় ফিরে দেখি জনির রুমের দরজা বন্ধ। মনে করেছি তারা ঘুমিয়ে পড়েছে। এরপর মঙ্গলবার সকালে আমরা ঘুম থেকে উঠলেও তাদের খবর নেইনি। ধারণা ছিল তারা হয়তো রুমে ঘুমিয়ে আছে। দুপুর আড়াইটায় ওয়ার্কশপ থেকে জনিকে খুঁজতে এলে ঘটনা ধরা পরে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভৈরবের রানীর বাজারে শাহজাহান মিয়ার সাততলা ভবনের একটি বাসা থেকে জনি চন্দ্র বিশ্বাস (৩০), তার স্ত্রী নিপা রানী বিশ্বাস (২৬), তাদের ছেলে ধ্রুব চন্দ্র বিশ্বাস (৮) ও মেয়ে কথা চন্দ্র বিশ্বাস (৬) এর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। স্ত্রী ও দুই সন্তানের লাশ মৃত অবস্থায় খাটে ছিল এবং পাখার সাথে গলায় কাপড় দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল জনির লাশ। পুলিশের ধারণা সোমবার রাতের কোন এক সময় স্বামী প্রথমে তার স্ত্রীকে হত্যা করার পর দুই সন্তানকে হত্যা করে নিজে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। স্ত্রী নিপা ৫ মাসের অন্তসত্বা ছিল বলে জানা গেছে। জনি বিশ্বাস ভৈরব বাজারের একটি ওয়ার্কশপে লেদ মিস্ত্রী হিসাবে কাজ করতেন।
মঙ্গলবার কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসান চৌধুরী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এছাড়াও পুলিশের ক্রাইমসিন বিভাগ, পিবিআই, সিআইডির কর্মকর্তাগণ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। গতকাল বুধবার চারজনের লাশের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়।
ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শাহিন মিয়া জানান, এ ঘটনায় জনির মা বাদী হয়ে থানায় অজ্ঞাত আসামী দিয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলাটি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।