নিজস্ব প্রতিবেদক: কিছুটা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হারিছের (৭০) কোনো শত্রু ছিলনা। গ্রামের সবার সঙ্গেই তার ছিল ভালো সম্পর্ক। এরপরও কেন তাকে হত্যা করা হলো-এ প্রশ্ন সবার মুখে মুখে। হারিছ হত্যার মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। সিআইডি বলছে খুব শিগগির হারিছ হত্যার রহস্য প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
ঘটনাটি কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার দক্ষিণ ধলা গ্রামের।
এক বছরের ব্যবধানে দুজনকে হত্যার পর এসব মামলার বাদী ও সাক্ষীদেরকে ফাঁসাতে নিজের ভাইকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। তৃতীয় হত্যাকাণ্ডের পর প্রতিপক্ষের বড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে নিয়ে গেছে সর্বস্ব। কোনো কোনো বাড়ির ভিটেমাটিটুকুও কেটে নেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় অন্তত ৩০ টি পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়ে প্রায় দুই বছর ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ২০২০ সালের ১৪ এপ্রিল দুপুরে কৃষক মকদুম মিয়াকে প্রকাশ্য দিবালোকে বল্লম দিয়ে গুরুতর জখম করেন আসাদ ও তার লোকজন। ঘটনার এক সপ্তাহ পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মকদুম মিয়া। এ ঘটনার পরে বছর না ঘুরতেই ঘটানো হয় আরেকটি হত্যাকাণ্ড। এবারও প্রকাশ্য দিবালোকেই হত্যা করা হয় কৃষক বুলবুল মিয়াকে। একপর্যায়ে ভুক্তভোগী পরিবারকে চাপে রেখে দেওয়া হয় মীমাংসার প্রস্তাব। মীমাংসার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয় আসামিরা।
পরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ঘটানো হয় আরেকটি হত্যাকাণ্ড, এমন অভিযোগ এলাকাবাসী অনেকেরই। এই হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন আসামি আসাদের সহোদর বড় ভাই কিছুটা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হারিছ মিয়া। ২০২৩ সনের ২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার দিকে মুখে গামছা বেঁধে হারিছকে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয় প্রতিপক্ষের প্রতিটি বাড়িঘর। বেশিরভাগ বাড়ির চাল ও বেড়ার টিন পর্যন্ত খুলে নেওয়া হয়েছে। ভিটেমাটি কেটে কোনো কোনো বাড়ির চিহ্ন পর্যন্ত রাখেনি। এসব জায়গা দখল করে কোথাও পুকুর আবার কোথাও করা হয়েছে সবজির বাগান, কেটে নেওয়া হয়েছে ফসলি জমি ও গাছপালা। সেই থেকে বাড়িছাড়া ত্রিশটি পরিবারের দেড়শর মতো মানুষ।
হারিছ হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী দাবিদার শামীম মিয়া জানান, হারিছকে তার ছোট ভাই আসাদ ও তার লোকজন হত্যার সময় তিনি দেখে ফেলেন। পরে কাউকে কিছু না বলার জন্য হুমকি দেয় তাকে। হুমকির বিষয়টি তিনি গ্রামের কয়েকজনকে জানালে তারা মুখ বন্ধ রাখতে বলেন।
একই গ্রামের শফিকুল ইসলাম নবাব জানান, ২০২০ সনে আসাদ ও তার লোকজন মকদুমকে তার সামনেই প্রকাশ্যে হত্যা করে। এ ঘটনার সাক্ষী হওয়ায় আসাদরা তিনিসহ তার বাবাকে একটি খুনের মামলাসহ তিনটি মামলার আসামি করে। আসাদরা তাদের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে সবকিছু নিয়ে যায়। সেই থেকে ত্রিশ/চল্লিশটি পরিবার বাড়িছাড়া।
একই গ্রামের মোস্তফা বলেন, নিহত হারিছ কিছুটা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ছিল। হারিছের ছোট ভাই আসাদ মিয়ার সঙ্গে হারিছের স্ত্রীর অনৈতিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। তিনি আরো জানান, নিহত হারিছের কোন শত্রæ ছিলনা। ম‚লত দুটি হত্যা মামলা থেকে বাঁচতে ও প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে আসাদ ও তার লোকজনই হারিছকে হত্যা করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি আসাদ ও তার লোকজন। তবে তাদের পক্ষে মোজাম্মেলক হক নামে একজন বলেন, আগে পুলিশ ও সিআইডির কাছে যা বলা হয়েছে, এখন কোনো কিছু বললে তার সঙ্গে অসামঞ্জস্যতা হলে সমস্যা হতে পারে। সে কারণে কিছু বলা যাবেনা।
হারিছ হত্যার মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডি। সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার সৈয়দ মোহাম্মদ ফরহাদ জানান, সর্বোচ্চ তথ্যপ্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ফিজিক্যাল এবং ডিজিটাল সাক্ষ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। খুব শিগগির ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা সম্ভব হবে।