নিজস্ব প্রতিবেদক: কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে কাইনহা বিলে ফুটেছে পদ্মফুল। আর এই বিলে ফুটা পদ্মফুল দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন বিভিন্ন সৌন্দর্যপ্রেমি হাজারো মানুষ। দীর্ঘদিন যাবত প্রাকৃতিকভাবে এখানে পদ্মফুল ফোটায় এই বিলটি এখন পদ্মবিল হিসেবেই পরিচিতি লাভ করেছে। এখন পদ্মবিল বলেই চেনেন সবাই।
তাড়াইল সাচাইল ইউনিয়নের দড়িজাহাঙ্গীরপুর গ্রাম সংলগ্ন বিস্তৃত এলাকা জুড়ে এই বিলের অবস্থান। প্রতিবছরই বর্ষা ও শরৎকালে এই বিলে ফুটে পদ্মফুল। তবে বিলে পানি কম থাকায় অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ফুল কম। তারপরও পর্যটকদের ভিড়ের কোন কমতি নেই। পদ্মফুল আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ভিড় করছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। পর্যটকদের পদ্মবিলের সৌন্দর্য দেখাতে বিলের পাড়েই ছোট ছোট ডিঙি নৌকা নিয়ে বসে থাকে ছোট ছোট ছেলেরা। তাদেরও জীবিকা নির্বাহের দ্বার খুলেছে এই বিলকে কেন্দ্র করে।
পদ্মফুল দেখতে এসে সেই সৌন্দর্যের সাথে নিজেকে ক্যামেরাবন্দী করছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। সেই ছবি এবং ভিডিও আবার নিজেদের ফেসবুক এবং বিভিন্ন গ্রুপে আপলোড করছেন। মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এর ফলে প্রতিদিন সেখানে ভিড় বাড়ছে ভ্রমণপিপাসুদের।
পরিবার পরিজনদের নিয়ে এই বিলে ঘুরতে এসেছেন মো.আফজল হোসেন। তার বাড়ি টাঙ্গাইলে। তিনি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ম্যানেজার (অর্থ) হিসেবে কর্মরত। তিনি বলেন, প্রতিবছরই এই পদ্মবিলের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখি। অনেকের ঘুরে বেড়ানো দেখে আমারও ইচ্ছে হলো। তবে সময়-সুযোগ না মেলায় ইচ্ছে থাকা সত্বেও এখানে আসার সুযোগ হয়নি। এবার সুযোগ পেয়ে পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছি। ছোট ছোট ভিঙি দিয়ে পুরো বিল ঘুরে দেখেছি। প্রাকৃতিকভাবে ফোটা পদ্মফুলের সৌন্দর্য দেখে মনটা ভরে গেছে।
একই প্রতিষ্ঠানে হিসাবরক্ষক পদে কর্মরত মতিউর রহমানও পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন পদ্মবিলে। তিনি বলেন, গত বছর আমাদের সহকর্মীদের মধ্যে অনেকেই এই বিল ঘুরে গেছেন। তারা ঘুরে গিয়ে এখানকার সৌন্দর্যের কথা অনেক বলেছেন। তাদের ক্যামেরায় ধারণকরা ছবিগুলো দেখে তখনই মন চেয়েছিল ছুটে আসি। কিন্তু সুযোগ মেলেনি। এবার অনেক আগে থেকেই খোঁজ রেখেছি কবে পদ্মফুল ফুটবে। ফুল ফোটার খবরে আজকে এসে পুরো বিলটাই ঘুরে দেখেছি। সত্যিই অসাধারণ। পদ্মবিলের সৌন্দর্য আমাদের মুগ্ধ করেছে।
পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুরতে এসেছেন সুরাইয়া খানম হিম। তিনি থাকেন পাশের উপজেলা করিমগঞ্জে। হিম বলেন, তাড়াইলের পদ্মবিলে ফোটা পদ্মফুলের ছবি বেশ কয়েকদিন যাবত ফেসবুকে দেখে ইচ্ছে হচ্ছিল এখানে আসার। তবে আমার স্বামীর ছুটি না থাকায় আসতে পারিনি৷ আজকে তিনি ছুটি পাওয়ায় চলে এসেছেন। ডিঙি নৌকা নিয়ে পুরো বিল ঘুরে বেড়িয়েছেন তারা।
পদ্মবিলে ডিঙি নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন ১৩ বছর বয়সী কাউসার মিয়া। কাউসার বলেন, সারাবছর অন্যান্য কাজের ফাকে মাছ ধরি। কিন্তুু বিলে পদ্মফুল ফুটলে তখন আর কিছুই করিনা। শুধু বিলের ভিতরে নৌকা চালাই। প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা রোজগার হয়। আর শুক্র/শনিবারে রোজগার একটু বেশি হয় বলেও জানায় কাউসার।
তাড়াইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুবনা শারমীন বলেন, প্রতিবছরের বর্ষা ও শরৎকালে এই বিলে পদ্মফুল ফুটে। পদ্মফুলের এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন এখানে ছুটে আসেন। তবে গ্রামের ভিতর দিয়ে বিলে প্রবেশের যে রাস্তাটি রয়েছে সেখানে ইটের সলিং বা পাকা না থাকায় একটু বৃষ্টিতেই গাড়ি প্রবেশের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। পর্যটকদের অসুবিধার কথা চিন্তা করে রাস্তাটি মেরামতের পাশাপাশি বিলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।