নিকলী (কিশোরগঞ্জ) সংবাদদাতা: কিশোরগঞ্জের নিকলীতে গণধর্ষণের পর আশামনি নামে এক নারীর মৃত্যুর ঘটনায় আসামিদের গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। আজ শুক্রবার বিকালে দক্ষিণ জাল্লাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ঘন্টাব্যাপী এ কর্মসূচি পালিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা অবিলম্বে সকল আসামিকে গ্রেফতার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান। ভিকটিমের পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ মানববন্ধনে অংশ নেন।
আশামনির মা ফাহিমা আক্তার বলেন, আমরা অসহায় মানুষ। আমার মেয়েটারে বেইজ্জত করে মাইরে ফালাইছে। অহন বিচার পাইতাছিনা। আসামিরা হুমকি দিতাছে। মামলা কইরে অহন বিফদে আছি।
প্রতিবেশী মোরশেদা খাতুন সেদিন আশামনিকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। তিনি জানান, আশামনি মৃত্যুর আগে যাদের নাম বলে গেছে, তাদের নামেই মামলা হয়েছে। মামলা করার পর পুলিশ চারজনকে গ্রেফতার করে। কারাগারে থাকা আসামিদের স্বজন এবং বাহিরে থাকা আসামিরা বিভিন্ন সময়ে হুমকি দিচ্ছে। মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করছে। এ অবস্থায় তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানান তিনি।
মামলার বাদী জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ করেন, বিয়ের পর থেকেই আশামনির স্বামী লালচান তাকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করার জন্য চাপ দিত। স্বামীর সহযোগীরাও তাকে রাস্তাঘাটে অশ্লীল ইঙ্গিত করতো। এ কাজে সে রাজি না হওয়ায় তাকে তুলে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। সংঘদ্ধভাবে ধর্ষণের ফলে তার মৃত্যু হয়। তিনি অভিযোগ করেন, এ ঘটনায় মামলার পরই আশামনির স্বামীসহ চারজনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। কিন্তু মামলার চিহ্নিত সাত আসামির মধ্যে তিন আসামিকে পুলিশ গ্রেফতারে তালবাহানা করছে।
অভিযোগে তিনি আরও বলেন, মামলার ১ নম্বর আসামি সাবেক মেম্বার রনিসহ অন্যরা প্রকাশ্যে ঘুরছে এবং বাদি ও তার লোকজনকে হুমকি দিচ্ছে। ৩ নম্বর আসামি সুকন মিয়ার বোন জামাই চাঁন মিয়া জারইতলা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি ও হুমকি দিচ্ছেন। এছাড়া অন্য আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুলিশকে জানালেও তারা গুরুত্ব দিচ্ছেনা। এ অবস্থায় বাদী ও তার লোকজন খুবই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানান তিনি।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায় , গত ২৭ জুন রাত আটটার দিকে বাবার বাড়ি দক্ষিণ জাল্লাবাদ থেকে স্বামীর বাড়ি সাহাপুরে যাচ্ছিলো আশামনি। সাহাপুর মোড়ে পৌঁছামাত্র আসামিরা তার মুখে গামছা পেচিয়ে একটি পতিত জমিতে নিয়ে যায়। সেখানে তার স্বামীর সহযোগিতায় আসামিরা রাতভর পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরদিন সকালে স্থানীয়রা তাকে বিবস্ত্র অবস্থায় উদ্ধার করে নিকলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। অবস্থা গুরুতর দেখে চিকিৎসকরা তাকে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৯ জুন রাত ২ টার দিকে আশামনির মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ঐদিনই আশামনির মামা জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে ৭ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও তিন/চারজনকে আসামি করে নিকলীথানায় মামলা দায়ের করেন।
নিকলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ মনসুর আলী আরিফ জানান, ঘটনার খবর পেয়েই সংশ্লিষ্ট চারজনকে আটক করা হয়। বাকি আসামিদেরকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। খুব শিগগির তাদেরকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।