সাইফউদ্দীন আহমেদ লেনিন: কিশোরগঞ্জ শহরের রথখলা এলাকার বাসিন্দা এডভোকেট শেখ ফারুক আহম্মদ প্রতিবছর ঈদের আগে সোনালী ব্যাংক থেকে নতুন টাকার নোট সংগ্রহ করেন। কিন্তু এবার পাননি নতুন নোট। সোনালী ব্যাংক কিশোরগঞ্জ শাখা থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে তাকে। তার মতো আরও অনেকেই মন খারাপ করে ফিরছেন। এমনকি বেসরকারি ব্যাংকগুলোও নতুন নোট সংগ্রহ করতে পারেনি। নানা সমস্যার অজুহাত দেখাচ্ছে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সন্তোষজনক কোন জবাব দিতে পারছেনা কাউকেই।
প্রতি বছর ঈদের আগে ট্রেজারী শাখা হিসেবে সোনালী ব্যাংক নতুন টাকার নোট সংগ্রহ করে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। পরে সোনালী ব্যাংক থেকে তাদের নিজস্ব শাখা, বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংক এবং গ্রাহকদের মাঝে নতুন নোট বিনিময় করে থাকে। কিন্তু এবার হয়েছে ব্যতিক্রম। কিশোরগঞ্জের বেসরকারি একাধিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপক জানান, প্রতিটি ব্যাংকই নতুন নোটের জন্য সোনালী ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নতুন নোট আনতে না পারায় সকলেই বঞ্চিত হয়েছেন। এ জন্যে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষকের গাফিলতিকেই দায়ী করছেন তারা। তবে বেসরকারি ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কথা বিবেচনা করে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ঢাকা থেকে নতুন টাকার নোট সংগ্রহের চেষ্টা করবে বলে জানা গেছে। একটি ব্যাংকের গ্রাহক এডভোকেট শেখ ফারুক আহম্মদ জানান, ঈদে জাকাত ও ফিতরা দেওয়া এবং ঈদসালামির জন্য ব্যাংক থেকে নতুন নোট সংগ্রহ করেন তিনি। কিন্তু এবার সামান্য পরিমাণ নতুন নোটও পাননি।
কী কারণে এবার নতুন নোট সংগ্রহ করা হয়নি, এমন প্রশ্নে সোনালী ব্যাংক কিশোরগঞ্জ শাখার এসিস্টেন্ট জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) মো. আব্দুল আওয়াল জানান, র্যামিট্যান্স কম থাকায় এবার নতুন টাকা আনা যায়নি। একবার র্যামিট্যান্স করতে অনেক যজ্ঞ, অনেকটা যুদ্ধ জয়ের মতো মন্তব্য করে এই কর্মকর্তা বলেন, দুই মাস আগে থেকেই একজন কর্মকর্তাকে আলাদা করে দিতে হবে এ কাজের জন্য। বাক্স তৈরির জন্য ৩/৪ জন মিস্ত্রী লাগে। পুলিশ ফোর্সের জন্য অনেক আগে থেকেই এসপি সাহেবকে বলতে হয়। গ্রাহকের প্রয়োজনে নয়, নিজেদের প্রয়োজনে নতুন নোট আনার মতো অবস্থা তৈরি হলে আমরা নতুন নোট আনতে বাধ্য জানান এই কর্মকর্তা।
তবে সোনালী ব্যাংক প্রিন্সিপাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) জাহাঙ্গীর আলম সিদ্দিকী বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি জানান, র্যামিট্যান্স নয়, টাকার ইনপুটের তুলনায় আউটপুট কম। অর্থাৎ টাকা স্ফিত হয়ে আছে। এ বছর মন্দা পরিস্থিতি উল্লেখ করে তিনি জানান, আমাদের যে টাকা আছে, সেটা দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নতুন টাকা চাইতে পারবোনা। বাংলাদেশ ব্যাংক এবার যে নতুন নোট ছেড়েছে, সেটা শুধুমাত্র ঢাকার জন্য বলে জানান এই কর্মকর্তা। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সোনালী ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, এসব কিছু বাহানা মাত্র। কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করলেই নতুন নোট আনতে পারতেন।
নতুন টাকার জন্য প্রতিদিনই ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকদের ভিড় বাড়ছে। কিন্তু সোনালী ব্যাংক নতুন টাকা আনতে না পারায় কোনো ব্যাংকই গ্রাহকদেরকে নতুন টাকা সরবরাহ করতে পারছেনা। এ নিয়ে ক্ষেভের শেষ নেই গ্রাহকদের।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংক এবার প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা নতুন নোট ছেড়েছে।