নিজস্ব প্রতিবেদক: কিশোরগঞ্জে ভুয়া প্রতিবন্ধীদের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে বলে জানা গেছে। ঘটনাটি কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের। ভুয়া হিসেবে ৬৮ জন শনাক্ত হলেও টাকা উত্তোলন করা হয়েছে ৪৮ জনের। ঘটনা প্রকাশ পেলে বাকি ২০ জনের টাকা উত্তোলনের বিষয়টি আটকে দেন জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ পরিচালক।
অভিযোগে জানা গেছে, ২০২২–২০২৩ অর্থ বছরে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বৌলাই, কর্শাকড়িয়াইল, দানাপাটুলি, মহিনন্দ ও লতিবাবাদ ইউনিয়নের প্রকৃত প্রতিবন্ধীদের বাছাই করে তালিকাভূক্ত করেছিলেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা। তালিকা উপজেলা বাছাই কমিটিতে গেলে এমআইএস (মেনেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম) তালিকাভূক্ত করে তাদেরকে ‘অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা পরিশোধ বই’ ও পরিচয়পত্র দেওয়া হয়। ভাতা প্রদানের জন্য ব্যাংক এশিয়া থেকে প্রত্যেকের মোবাইল ফোনে একটি নম্বরসহ বার্তাও পাঠানো হয়। প্রত্যেকের এক বছরের ভাতা বাবদ ১০ হাজার ২০০ টাকা করে ব্যাংক এশিয়ার তাড়াইল উপজেলা শাখা থেকে উত্তোলন করার কথা ছিল। তবে উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে পে–রোল পাঠানোর পরই ভাতা নিশ্চিত হয়। কিন্তু সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা এমআইএস তালিকা থেকে এই ৬৮ জনের নাম সরিয়ে নতুন ৬৮ জনের নাম বসিয়ে তাদের নামে পে–রোল প্রেরণ করেন। ফলে রহস্যজনক কারণে বাদপড়া প্রকৃত ৬৮ জন প্রতিবন্ধীর নামে আর ভাতা হয়নি। এ অবস্থায় তারা জেলা সমাজসেবা অফিসে খোঁজ নিতে গেলে দুর্নীতির ঘটনাটি জানাজানি হয়।
নতুন এমআইএস তালিকাভূক্ত ৬৮ জনের কেউই প্রতিবন্ধী নন এবং একই ইউনিয়নের অর্থাৎ মাইজখাপন ইউনিয়নের বাসিন্দা বলে জানা গেছে। সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আল আমিন সুস্থ ৬৮ জনকে প্রতিবন্ধী সাজিয়ে এবং বিভিন্ন ইউনিয়নে তাদের বর্তমান ঠিকানা দেখিয়ে এমআইএস তালিকাভূক্ত করে ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে এই ৬৮ জনের মধ্যে ৪৮ জনের ভাতা উত্তোলন করা হয়েছে মর্মে দেখানো হয়েছে। তবে বাস্তবে তাদেরকে ৫০০ টাকা করে দিয়ে বাকি ৯ হাজার ৭০০ টাকা করে মোট ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৬০০ টাকা আত্মসাত করেছেন মর্মে অভিযোগ উঠেছে সদরের কর্মকর্তা আল আমিনের বিরুদ্ধে।
বিষয়টি নজরে এলে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. কামরুজ্জামান খান একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শহীদুল্লাহকে প্রধান এবং করিমগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সাইফুল আলম ও নিকলী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আসিফ ইমতিয়াজ মনিরকে সদস্য করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। অভিযোগের সত্যতা সাপেক্ষে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান উপপরিচালক।
জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. কামরুজ্জামান খান জানান, সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়ে গত ২৮ আগস্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু তারা এখনও প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেননি। আরো কিছুদিন সময় নিয়েছেন তারা।
তদন্ত কমিটির প্রধান শহীদুল্লাহ প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন স্বীকার করে জানান, তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে আরও এক সপ্তাহ সময় লাগবে।
অভিযুক্ত সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আল আমিনের মোবাইল ফোনে কথা বললে এ বিষয়ে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
ঘটনাটি দুর্নীতি দমন কমিশন কিশোরগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের মাধ্যমে তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ।