নিজস্ব প্রতিবেদক: কিশোরগঞ্জ শহরের বত্রিশ নতুন পল্লী এলাকার এক নারী সম্প্রতি ফেসবুকের একটি গ্রুপে কিশোরগ্যাং এর উৎপাত নিয়ে একটি স্ট্যাটাস
দিয়েছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, নতুন পল্লী এলাকায় বাড়ি করেছেন চার বছর হলো। চাকরিসূত্রে স্বামী থাকেন বাইরে। মেয়ে ও ননদকে নিয়ে বাসায় থাকেন তিনি। যেদিন থেকে বাড়ি করেছেন, সেদিন থেকেই বাড়ির সামনে উঠতি বয়সী ছেলেদের আড্ডা। তারা নেশা করে অশ্লীল গালিগালাজ ও চিৎকার চেচামেচি করে। নেশার গন্ধে ঘরে থাকা দায়। বাসায় আত্মীয় স্বজন এলে লজ্জায় মাথা কাটা যায়।
ফেসবুকের স্ট্যাটাসটি জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনলে ত্বরিৎ ব্যবস্থা নেয় পুলিশ। পুলিশের নিয়মিত অভিযানে সেখানে নেশাখোরদের আড্ডা বন্ধ হয়েছে। একই অবস্থা ছিল শহরের চর শোলাকিয়া এলাকায়ও। পুলিশের নিয়মিত অভিযানে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে কিশোরগ্যাং।
কিশোরগঞ্জ শহরের প্রায় সব অলিগলিতে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে পুলিশের বিশেষ টিম। যখন, যেখান থেকেই অভিযোগ যাচ্ছে, মোটর সাইকেলে করে পৌঁছে যাচ্ছে বিশেষ টিম। কেউ কেউ ‘পুলিশের হোন্ডা পার্টি’ বলেও অভিহিত করছেন এই টিমকে।
মাসাধিককাল ধরে কিশোরগঞ্জ শহরে চলছে এমন অভিযান। মূলত কিশোরগ্যাং নিয়ন্ত্রণ করতে এই টিম বিশেষ ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. মোস্তাক সরকার জানান, কিশোরগ্যাংয়ের বিরুদ্ধে প্রায় দেড় মাস যাবত মোটরসাইকেলে করে পুলিশের বিশেষ অভিযান চলছে। এ সময়ে দুটি ছিনতাইয়ের মামলা, মোটরযান আইনে শতাধিক মামলা এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আটকদেরকে মুচলেকা নিয়ে অভিভাবকের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। এতে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে কিশোর অপরাধ।
কলেজছাত্র শরীফ আহমেদ বলেন, পুলিশের এ উদ্যোগে আমরা খুশি। আমরা পুলিশকে সহযোগিতা করতে চাই। তাছাড়া পারিবারিকভাবে আমাদেরকেও সচেতন হতে হবে।
কিশোরগঞ্জের বিশিষ্ট লেখক জাহাঙ্গীর আলম জাহান বলেন, কয়েক বছর ধরে কিশোরগঞ্জ শহরে কিশোরগ্যাং, মাদক, মেয়েদেরকে ইভটিজিং এসব অপরাধ মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল। শহরবাসী ছিল অতিষ্ট। এসব বিষয়ে অনেক লেখালেখি, অভিযোগ হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অতি সম্প্রতি নতুন পুলিশ সুপার একটি কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছেন। এর ফলে কিশোরগ্যাং অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। মাদক ও ইভটিজিংকেও নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলে শহরবাসী স্বস্তি পেতো।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ কিশোরগ্যাং নিয়ন্ত্রণে জিরো টলারেন্স নিয়ে পুরো জেলাতেই এমন অভিযান পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছেন। এজন্য অভিভাবক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সচেতন মহলের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, কোনো কিশোরকে আটক করার পর অভিভাবকের মুচলেকা নিয়ে হস্তান্তর করা হচ্ছে। অপরাধী হিসেবে নয়, প্রথম অবস্থায় সর্তক করার জন্য ধরা হচ্ছে। তবে কেউ অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। অভিভাবকদের সচেতন করা হচ্ছে কিশোরদের সব বিষয়ে যেন তারা খোঁজ খবর রাখেন।