নিজস্ব প্রতিবেদক: কিশোরগঞ্জ সোনালী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় অনিয়ম দুর্নীতি ও গ্রাহক হয়রানী হলেও এগুলোর বিচার হয়না। বরং সংশ্লিষ্টদের প্রশ্রয় দিয়ে এসব ধামাচাপা দেওয়া হয়। সোনালী ব্যাংকের
কিশোরগঞ্জের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. জাহাঙ্গীর আলম সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ উঠেছে।
সোনালী ব্যাংকের কটিয়াদী বাজার শাখায় কর্মরত আছেন সিনিয়র অফিসার মো. আতিকুর রহমান হালিম। ২০২১ সালে তিনি কর্মরত ছিলেন নিজ উপজেলা কুলিয়ারচরে। ঐ বছরের ১০ আগস্ট কুলিয়ারচর উপজেলা সমাজসেবা অফিসের বয়স্ক ভাতার ১২ লাখ ৩৩ হাজার ৮৮৬ টাকা সমাজসেবা অফিসের সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক তুহিন মিয়ার একাউন্টে স্থানান্তর করেন। পরে বিভিন্ন তারিখে সেই টাকা উত্তোলন করে তারা দুজনে আত্মসাৎ করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে একই বছরের ২১ অক্টোবর সেই টাকা ব্যাংকে জমা দেন তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আতিকুর রহমান হালিম ও তুহিন মিয়া ছোটবেলা থেকেই একসাথে বেড়ে উঠেছেন। তাদের বাড়িও একই ইউনিয়নে।
এ বিষয়ে তুহিন মিয়া জানান, ঋণ উঠানোর জন্য সোনালী ব্যাংকে একাউন্ট করেছিলেন তিনি। কিন্তু চেক বই ছিল হালিমের কাছে। এ সুযোগে টাকা তুলে খরচ করেন হালিম। এ বিষয়ে জানাজানি হলে সেই টাকা জমা দিয়ে দেন তিনি। আতিকুর রহমান হালিম টাকা স্থানান্তরের বিষয়টি স্বীকার করে জানান, ভুলবশত এমনটা হয়েছিল। পরে সেই টাকা আবার জমা দিয়েছি, ক্ষমাও চেয়েছি। এ বিষয়টিও উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে ধামাচাপা দেন ডিজিএম। পরে হালিমকে পার্শ্ববর্তী কটিয়াদী শাখায় বদলীর মাধ্যমে দেওয়া হয় প্রাইজ পোস্টিং। কারণ তিনি ডিজিএমের পছন্দের লোক। তার পছন্দমতো না হলেই কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সুবিধা অসুবিধার দিক বিবেচনা না করে ইচ্ছেমতো যখন যেখানে খুশি বদলি করেন।
নিয়ম-নীতিকে বৃদ্ধাগুলি দেখিয়ে সিনিয়র অফিসার স্বপ্না বর্মণ, ফেরদৌসুল হক, মাহফুজুর রহমান, আব্দুস সাত্তার, ঝুটন বর্মণ, খাইরুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজনকে পদোন্নতির পরও পূর্ববর্তী শাখায় ব্যাক পোস্টিং দিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে ডিজিএমের বিরুদ্ধে।
এদিকে ওভারটাইম শুধু কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ থাকলেও এখানে দেখা গেছে বিপরীত চিত্র। ডিজিএমের কাছের লোক হিসেবে পরিচিত সিনিয়র অফিসার মাহফুজুর রহমান গোপনে ভুয়া ওভারটাইম বিল নেওয়ার পর তার বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকের ন্যায়পালে অভিযোগ উঠে। তদন্তের পর প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক টাকা ফেরত দেন তিনি। তার বিরুদ্ধেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তিনি এখন পর্যন্ত প্রিন্সিপাল অফিসে আছেন বহাল তরিয়তে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সোনালী ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, ডিজিএম তার পছন্দের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে তদন্ত বা বিচার না করে ধামাচাপা দেন এবং অভিযোগকারীদের ম্যানেজ করার চেষ্টা চালান।
সম্প্রতি সোনালী ব্যাংকের কটিয়াদী শাখার ঋণ কর্মকর্তা মো. সজিব মিয়ার বিরুদ্ধে শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণ ও ঘুষ নেয়ার অভিযোগ উঠে। ২৩ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে ডিজিএম জাহাঙ্গীর আলম সিদ্দিকীর কাছে লিখিত অভিযোগ দেন স্থানীয় পাইকসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাহমুদ কামাল। তদন্ত কমিটি গঠন না করে অভিযোগকারীকে ফোন করে ভীতি প্রদর্শন করেন ডিজিএম (এমন একটি অডিও রেকর্ডও এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে)। এক পর্যায়ে ঐ শিক্ষকের কাছে ক্ষমা চেয়ে তাকে ম্যানেজ করে অভিযোগটি নিষ্পত্তি করা হয়। এ বিষয়ে ডিজিএম জানান, দুপক্ষই ক্ষমা চেয়েছেন।
অপরদিকে ২০১৯-২০২০ সালের সকল মনোহারী দ্রব্য, কাগজসহ কম্পিউটার সামগ্রি কেনার দায়িত্বে ছিলেন সাবেক যুগ্ম জিম্মাদার মো. সোলায়মান ও বর্তমান যুগ্ম জিম্মাদার শওকতুল ইসলাম। তখন জাহাঙ্গীর আলম ছিলেন এজিএম। তারা সেগুলো কিশোরগঞ্জ থেকে না কিনে পাকুন্দিয়া থেকে কিনেন। মূলত সেখান থেকে ফাঁকা ক্যাশমেমো এনে ১৮০ টাকার কাগজ ৩০০ টাকা, ৫০০ টাকা মূল্যের টোনার ৯০০, ১১০০ এবং ১৫০০ টাকা বিল করেন।
এ বিষয়ে পাকুন্দিয়ার মনির কম্পিউটারের স্বত্বাধিকারী মনির হোসেন ফাঁকা ক্যাশ মেমো দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন।
এসব বিষয়ে ডিজিএম জাহাঙ্গীর আলম সিদ্দিকী জানান, ব্যাংকেরই একটা কুচক্রীমহল বিভিন্ন সময়ে ছদ্মনামে অভিযোগ করে প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুন্ন করছে। তার নিজের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, প্রতিটি বিষয়েই উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেই কাজ করছি। কোন কিছুই গোপন বা ধামাচাপা দেওয়া হয়নি।