নিজস্ব প্রতিবেদক: ঈদ ও বৈশাখ উপলক্ষে জমজমাট মেলা বসেছে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার গচিহাটা কলেজ মাঠে। কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও গচিহাটা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জন এ মেলার আয়োজন করেছেন।
মেলায় চরকি, নাগরদোলা, মাটির খেলনা ও তৈজসপত্র, গহনা, মুখরোচক নানা ধরণের খাবারসহ বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। বিক্রিও হচ্ছে দেদারছে। সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও মনোরম পরিবেশে মেলার আয়োজন করায় সব বয়সী নারী-পুরুষ প্রতিদিন ভিড় করছেন মেলা প্রাঙ্গণে। অনেকেই পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে মেলায় আসছেন। মানুষের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে রাতের বেলায় লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মেলার আয়োজক সাবেক এমপি মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জন বলেন, একসময় আমরা সময়টা দিতাম টেলিভিশনের সামনে বসে। কিন্তু আজকে টেলিভিশনের প্রোগ্রামগুলো এতবেশি কোটারিভিত্তিক হয়ে গেছে যে, টেলিভিশনের প্রতি মানুষের এতবেশি ঝোঁক নেই। ছেলে মেয়েরা চলে যাচ্ছে ইন্টারনেটের দিকে। ইন্টারনেটে ভালো-মন্দ দুটো দিকই আছে। কিন্তু গ্রামের ছেলে মেয়েরা যাবে কোথায়? তারা টেলিভিশনের নাটকও বুঝেনা, রাজনীতির একপেশে খবরও তারা পছন্দ করেনা। তিনি জানান, আমাদের এই গচিহাটার অনেক লোক পরিবার নিয়ে ঢাকা শহরে কর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকে। তারা খুব উপরের স্তরের লোক না। তারা সাধারণ শ্রমিক, পেশাজীবী, ছোটখাটো দোকানদার। কিন্তু ঢাকাতে বিনোদনের যে সুযোগ সুবিধা রয়েছে, সেগুলোতে যাওয়ার সময় পায়না তারা। এই ছুটির সময় আমরা দেখি ঢাকার প্রায় তিন ভাগের দুই ভাগ লোক গ্রামে চলে আসে। এরা গ্রামে এসে কী করবে? বাড়িতে থাকার মত বড় ঘরও নেই। তিন চার ভাই এলে থাকারও জায়গা হয়না। নাড়ির টানে আসে এরা। কিন্তু এসে তারা একঘেয়েমির মধ্যে পড়ে যায়। তাদের জন্য কিছু বিনোদনের ব্যবস্থা করা যায় কিনা, এই ভাবনা থেকেই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। ঈদ এবং বৈশাখ এ দুটো মিলিয়েই আয়োজনটা করা হয়েছে, যাতে মানুষ সময়টা কাটাতে পারে।
তিনি আরও জানান, প্রায় ১০ বছর ধরে ছোটখাটো কিছু করা হচ্ছে। করোনার পর থেকে ব্যাপকভাবে শুরু করা হয়েছে। সেই ভাবনা থেকে এবারও মেলার আয়োজন করা হয়েছে। নির্মল বিনোদন পেয়ে মানুষের উৎসাহ উদ্দীপনা বেড়ে গেছে বলেও জানান তিনি। পরিবার পরিজন, সন্তান সন্ততি নিয়ে মানুষ মেলায় আসছে। ছেলে মেয়েরা দলবেধে মেলা প্রাঙ্গণে বসে সময় কাটাচ্ছে। তারা বাইরে অযথা আড্ডা মারছেনা, ইন্টারনেট নিয়ে বসে থাকছেনা। এসব ছেড়ে তারা নাগরদোলায় চড়ছে, নাচ-গান নিয়ে ব্যস্ত থাকছে, ফুচকা খাচ্ছে, মেয়েরা চুড়ির দোকান থেকে চুড়ি কিনছে। মানুষ এগুলো চায়। কিন্তু আমরা দিতে পারছিনা। দলমত নির্বিশেষে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে আমরা উৎসব করার চেষ্টা করছি। এতে মানুষের ব্যাপক সাড়াও মিলছে বলে জানান তিনি।
মেলা আয়োজনের ক্ষেত্রে স্থানীয় সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ ও স্থানীয় প্রশাসন সহযোগিতা করায় তিনি তাদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
ঈদেরদিন থেকে মেলা শুরু হয়েছে, চলবে মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত মেলা প্রাঙ্গণ সবার জন্য উন্মুক্ত। মেলা প্রাঙ্গণে প্রতিদিন বাড়তি আকর্ষণ হিসেবে রয়েছে বিভিন্ন শিল্পীর গানের আসর।