নিজস্ব প্রতিবেদক: কিশোরগঞ্জে মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এখন পর্যন্ত সুরক্ষিত কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। মেডিকেল বর্জ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজের উদ্যোগে শনিবার সন্ধ্যার পর শহরের একটি হোটেলে আয়োজিত সেমিনারে উদ্বেগের কথা জানান তারা।
মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. আ. ন. ম নৌশাদ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক। বিশেষ অতিথি ছিলেন শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. হাবিবুর রহমান, কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. সাইফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. হোসনা বেগম ও প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. মো. শহীদুল্লাহ।
বক্তারা বলেন, কিশোরগঞ্জে এতগুলো ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থাকার পরও এখন পর্যন্ত কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে না পারা দুঃখজনক। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে সেমিনারে উপস্থিত হাসপাতাল এবং ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক কর্তৃপক্ষ মেডিকেল বর্জ্য ধ্বংসে সম্মিলিতভাবে আধুনিক ও উন্নত ব্যবস্থাপনা গ্রহণে সম্মত হন। এ লক্ষ্যে তারা প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে বৈদ্যুতিক ইনসিনারেশন যন্ত্র ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নেন। এ যন্ত্রের দ্বারা উচ্চ তাপমাত্রায় মেডিকেল বর্জ ধ্বংস করা যায়।
সেমিনারে মেডিকেল বর্জ্যের ক্ষতিকর দিক, ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়ে ভিডিও ক্লিপ উপস্থাপন করেন প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক ডা. খন্দকার মুস্তাকিম আহাম্মদ ও রিসার্স কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম।
সেমিনারে বক্তারা আরও বলেন, হাসপাতালে উৎপাদিত বর্জ্যের ৮০ শতাংশ সাধারণ এবং ২০ শতাংশ ক্ষতিকারক। তবে ব্যবস্থাপনা ত্রুটির কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সবই ক্ষতিকারক বর্জ্যে পরিণত হচ্ছে, যা থেকে বিভিন্ন ধরণের সংক্রামক রোগ ছড়াচ্ছে। চিকিৎসা বর্জ্যের সঙ্গে যেসব রাসায়নিক পদার্থ ও হেভি মেটাল থাকে, তা থেকে অসংক্রামক রোগও ছড়ায়। এসব বর্জ্য রোদে শুকিয়ে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, চর্ম রোগ ছাড়াও বিভিন্ন ক্রনিক রোগ যেমন– ডায়াবেটিস, রেনাল ফেইলর, হেপাটাইটিস-বি এমনকি দূরারোগ্য ক্যানসারের মাতো রোগের প্রকোপ দিনে দিনে বাড়ছে। এর বাইরে সংগৃহীত ময়লা যথাযথ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ ও বিনষ্ট না করায় সেগুলো পানিতে মিশে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
বক্তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে মেডিকেল বর্জ্য যথাযথ প্রক্রিয়ায় ধ্বংসের পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান এবং তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ প্রদানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সেমিনারে কিশোরগঞ্জ সোসাইটি অব হেলথ সার্ভিসেস এর ৪৫ জন প্রতিনিধিসহ সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।