নিজস্ব প্রতিবেদক: কিশোরগঞ্জে ভিজিএফ এর চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কার্ডধারী প্রত্যেককে ১০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হচ্ছে ৭ কেজি ৭৩০ গ্রাম থেকে সাড়ে ৮ কেজি করে। পরিমাণে কম দেওয়ায় উপকারভোগীরা ক্ষুব্ধ থাকলেও চেয়ারম্যানের দাপটে মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রতিটি ইউনিয়নেই চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর করা টোকেনে মাল দেওয়া হচ্ছে।
সরেজমিনে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মাইজখাপন, মহিনন্দ, লতিবাবাদ ও রশিদাবাদ ইউনিয়নে গিয়ে দেখা গেছে, ট্যাগ কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতেই চাল বিতরণ করা হচ্ছে। ডিজিটাল মেশিনে বা কাটাতে ওজন করে চাল দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হচ্ছে বালতিতে। চাল পাওয়া কয়েকজনের চাল আবার ডিজিটাল মেশিনে মেপে দুই থেকে আড়াই কেজি চাল কম পাওয়া গেছে।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি ভিজিএফ কার্ডধারী ১০ কেজি করে চাল পাবেন। অথচ সদর উপজেলার এই চার ইউনিয়নের কোনটিতেই কার্ডধারী কেউ সঠিক মাপে চাল পাননি।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় মাইজখাপন ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা গেছে, ইউপি সচিব রেজাউল করিমের উপস্থিতিতে প্লাস্টিকের বালতিতে চাল মেপে দিচ্ছেন গ্রামপুলিশ সুলতান আহমেদ। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করছেন চেয়ারম্যানের কর্মী ফুল মিয়া। ওজনে কম দেওয়া প্রশ্নে তিনি বললেন, এ কথা চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞেস করেন। এক পর্যায়ে সটকে পড়েন তিনি। পরে চেয়ারম্যানকে ফোন করলে তিনি এসে জানান, শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় সচিবকে দায়িত্ব দিয়ে বাড়িতে বিশ্রামে ছিলেন। ট্যাগ কর্মকর্তা সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জহিরুল ইসলামকে ফোন করলে তিনি ট্রেনিংয়ে আছেন বলে জানান।
এ ইউনিয়নের কাচারিপাড়া গ্রামের হারুন মিয়া চাল কম পাওয়া প্রসঙ্গে বলেন, যেটুকু পেয়েছি সেটা নিয়েই বাড়ি যেতে হবে। প্রতিবাদ করলে পরেরবার নাম বাদ যাবে।
বেলা সাড়ে ১২টায় মহিনন্দ ইউনিয়নে গিয়ে দেখা গেছে, পরিষদের একটি কক্ষে কয়েকজন ইউপি সদস্য ও গ্রাম পুলিশদের নিয়ে প্লাস্টিকের বালতিতে করে চাল দিচ্ছেন চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী। ওজনে কম দেওয়া প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে কম দিচ্ছিনা। হয়তো দুই একটাতে সমস্যা হতে পারে। পরে কয়েকটা ব্যাগ ওজন করলে তিনি এই প্রতিবেদককে টাকার প্রলোভনে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন।
ট্যাগ কর্মকর্তা সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাঈদা রুবাইয়াত জানান, আগেরদিন যখন চাল বিতরণ করা হয়েছে তখন তাকে জানানো হয়নি। পরেরদিন তাকে জানানো হলেও সেদিন অফিসিয়াল কাজে ব্যস্ত ছিলেন।
শুক্রবার বেলা ১১টায় লতিবাবাদ ইউনিয়ন পরিষদেও দেখা মেলে একই চিত্র। চেয়ারম্যান একটি কক্ষে ইউপি সদস্য ও গ্রাম পুলিশদের নিয়ে বালতিতে করে চাল দিচ্ছেন। চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাকের দাবি পরিমাণে কম দেওয়া হচ্ছেনা, তড়িঘড়ি করে নেওয়ার সময় চাল পড়ে গিয়ে কম হয়। ট্যাগ কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক উপজেলা বিআরডিবির প্রকল্প কর্মকর্তা। তার মুঠোফোনে কল করলে ছুটে এসে জানান আপনারা আসার খানিকটা আগেই বাসায় গিয়েছিলাম।
রশিবাদাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম জুয়েলও বালতিতে করে চাল দিচ্ছেন। ওজনে কম দেওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। ট্যাগ কর্মকর্তা কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি সকালে এসে চলে গেছেন। একাধিক ইউপি সদস্য জানান, চাল বিতরণের প্রথমদিন ক্ষণিকের জন্য ট্যাগ কর্মকর্তা এসেছিলেন, পরে আর আসেননি। ট্যাগ কর্মকর্তা উপজেলা দারিদ্র বিমোচন কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম ভূইয়ার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আজকে যে চাল বিতরণ করা হচ্ছে তিনি সেটা জানেনই না।
কিশোরগঞ্জের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ–পরিচালক (ডিডিএলজি) মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।